ভারতের কলকাতা শহরটি বেড়ানোতে অনেক স্বল্প ব্যয়ে সুন্দর একটি বিদেশ ভ্রমণ। দেশের বাইরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকেরই প্রথম পছন্দ থাকে কলকাতা। বাঙ্গালিয়ানা সংস্কৃতি, ভাষার ঐক্য আর ভৌগোলিক নিকট অবস্থান সব মিলিয়ে কলকাতা পারফেক্ট জায়গা। আসুন জেনে নিই কলকাতা বেড়াতে গেলে কোন জায়গাগুলোতে অবশ্যই যাবেন। - See
১। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি-
কলকাতা গেছেন আর রবি ঠাকুরের বাড়ি দেখতে যাবেন না, তাই হয়? ১৮ শতকে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা এই বাড়ি নির্মাণ করেন। ঠাকুর পরিবারের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি এখন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ভবনের এক অংশে করা হয়েছে যাদুঘর, যেখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন ঠাকুরদের সেই প্রতাপশালী জীবন। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই পরিবারের অনেকেই রেখেছেন অনন্য অবদান। |
২। পার্ক স্ট্রীট- কলকাতার বিভিন্ন গল্প,কবিতা, গানে আছে পার্ক স্ট্রীটের কথা। পার্ক স্টীটকে বলা হয় ফুড স্ট্রীট। এই পুরো এলাকা জেগে থাকে সমস্ত রাত, এখানকার রেস্টুরেন্ট, ছোট-বড় খাবারের দোকান দিনরাত জালিয়ে রাখে নাগরিক আলো। রাতের কলকাতা দেখতে যেতে পারেন এখানে।
৩। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-
হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পর্যটকদের কাছে কলকাতার অন্যতম প্রধাণ আকর্ষণ। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার স্মরণে। ১৯০১ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুতে তৎকালীন লর্ড কার্জন এই মেমোরিয়ালটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। মোঘল এবং ব্রিটিশ স্থাপত্য ধারার মিশেলে তৈরি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল একটি অনন্য স্থাপনা। বর্তমানে এটি একটি যাদুঘর। যাদুঘরে রয়েছে ২৫ টি গ্যালারী। বিভিন্ন এন্টিক নিদর্শন এবং হস্ত নির্মিত শিল্পকর্ম এখানে প্রদর্শিত হয়।
৪। জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য-
পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জলদাপাড়া বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য। এখানকার প্রধাণ আকর্ষণ হচ্ছে এক শিংওয়ালা ভারতীয় গন্ডার। ২১৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বনটির অবস্থান, বিচিত্র ধরণের গাছ আর বন্য প্রানীতে সমৃদ্ধ এটি। এখানকার বিচিত্র প্রানীদের মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় হাতি, সাম্বার ইত্যাদি।
৫। বিরলা টেম্পল-
ইন্ডিয়ার সম্ভ্রান্ত বিরলা পরিবার মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি মূলত দেবতা কৃষ্ণ এবং রাধাকে উৎসর্গ করে নির্মিত। মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০ বছর সময় লেগেছিল এর নির্মাণ কাজ শেষ হতে। সাদা মার্বেলের তৈরি মন্দিরটি ১৩০ একর জায়গা জুড়ে করা হয়েছে। মন্দিরের নির্মাণ শৈলী এবং শান্ত পরিবেশ আপনাকে আনন্দ দেবে নিশ্চিত।
৬। ইডেন গার্ডেন-
নাম গার্ডেন বা বাগান হলেও ইডেন গার্ডেন কিন্তু কোন বাগান নয়, বরং একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের আগমনের একটি অন্যতম প্রাপ্তি ক্রিকেট। ইডেন গার্ডেন বিশাল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এটি ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের ৩য় বৃহৎ স্টেডিয়াম। সময় করে অবশ্যই দেখে আসবেন স্টেডিয়ামটি।
৭। মার্বেল প্যালেস ম্যানশন-
এই প্রাসাদসম ভবনটি রাজা রাজেন্দ্রমল্লিক নির্মাণ করেছিলেন ১৮৩৫ সালে। এর নির্মাণশৈলী আধুনিক এবং প্রাচীন স্থাপত্য ধারার মিশেলে এক নব্য ধ্রুপদী ধারার সূচনা করে। ভবনটিতে সংরক্ষিত আছে প্রাচীন এন্টিক আসবাবপত্র, আরো আছে বিভিন্ন চমৎকার চিত্রকর্ম। এর কাছেই রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা যা মার্বেল প্যালেস চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত। এখানেও অবশ্যই বেড়াতে যাবেন।
৮। কালীঘাট কালি মন্দির–
কলকাতার দেবী কালী ভক্তদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির এটি। প্রতিদিন হাজারেরও বেশী ভক্ত, দর্শনার্থী মন্দিরে আসেন। মন্দিরের দেবীর মূর্তিটি দেখতে জুতা খুলে লাইনে দাড়াতে হবে। তবে লাইনটি প্রায়ই অনেক বড় হয়। আপনি চাইলে শুধু মন্দিরের চারপাশটা ঘুরে দেখতে পারেন। তবে মন্দিরে ভন্ড প্রতাড়ক অনেক লোক আসে, যারা আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। তাই অবশ্যই সাবধানে থাকবেন।
৯। মাদার তেরেসা হাউজ-
মাদার তেরেসা দীর্ঘদিন ইন্ডিয়ায় বিশেষ করে কলকাতায় অবস্থান করেছেন। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর আবাসস্থল এবং মিশনারি কাজের বাড়িটি এখন ‘মাদার হাউজ’ নামে পরিচিত। বাড়িটির ভেতরে তাঁর কবর রয়েছে। একটি যাদুঘর রয়েছে যেখানে গেলে আপনি মাদার তেরেসার ব্যবহৃত জিনিসগুলো দেখতে পাবেন। তিনি প্রার্থণা করতে কোথায় বসতেন, কোথায় বসে লিখতেন সবই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
১০। হাওড়া ব্রীজ-
এটি পৃথিবীর ষষ্ঠ দীর্ঘতম ক্যান্টিলিভার ব্রীজ। কলকাতার এই বিখ্যাত ব্রীজটি অবশ্যই আপনার লিস্টে রাখুন। ব্রীজ থেকে নদীর অপরূপ দৃশ্য সহজেই আপনার বিকেলটিকে মনোরোম করে তুলবে। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে একে রবি সেতুও বলা হয়।
স্বাছন্দ্যে ৪/৫ দিনের ট্যুরে বেড়িয়ে আসতে পারেন কলকাতা। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নগরীটি আপনাকে হতাশ করবে না। বরং ফিরে আসবেন কখনোই ভোলার নয় এমন কিছু স্মৃতি নিয়ে।
|